প্রকাশিত: ০৯/০২/২০১৭ ৮:৩১ এএম , আপডেট: ০৯/০২/২০১৭ ৮:৩২ এএম

নিউজ ডেস্ক::
গ্যাং গ্রুপ। একটি, দুটি না। রাজধানীর শুধু উত্তরা এলাকাতেই রয়েছে কিশোর-তরুণদের অন্তত ৩০টি গ্রুপ। প্রতিটি গ্রুপে ২৫ থেকে ৩০ জন সদস্য রয়েছে। প্রায় ১৫ বছর আগ থেকে এসব গ্রুপের জন্ম হলেও আলোচনায় আসেনি। সর্বশেষ উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে স্কুলছাত্র আদনান কবির হত্যার পর একে একে প্রকাশ পাচ্ছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।

গ্যাং গ্রুপের ওপর নির্মিত ভারতীয় বিভিন্ন ফিল্ম অনুসরণ করে গ্রুপের সদস্যরা। নিজেদের এলাকার সম্রাট ভাবতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করে। কাউকেই তোয়াক্কা করে না এই বিপথগামী কিশোর-তরুণরা। এসব গ্রুপের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা গেছে, এলাকার আধিপত্য বিস্তার, স্কুল কলেজে র‌্যাগিং, ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, উচ্চ শব্দ করে মোটরসাইকেল, গাড়ি চালিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করাই তাদের কাজ। কখনও কখনও ছিনতাইয়ে জড়িয়ে যায় গ্রুপের সদস্যরা। মাদক ও শিসা সেবন করার ছবি, অশ্লীল ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করে তারা। এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী কাউকে মেনে নিতে পারে না। আধিপত্য বিস্তার নিয়েই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যায় তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, প্রকাশ্যে নানাভাবে এক গ্রুপের সদস্যরা অপর গ্রুপের সদস্যদের হুমকি-ধমকি দেয়। বিভিন্ন সময়ে মারধর-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ৭ই ফেব্রুয়ারি রাতে আদনান হত্যা মামলার আট আসামিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

র‌্যাব জানিয়েছে, ২০০১ সালের দিকে গ্যাং গ্রুপের উৎপত্তি রাজধানীর উত্তরা এলাকায়। বর্তমানে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৩০টি গ্রুপ রয়েছে। ডিসকো বয়েজ উত্তরা, নাইন স্টার ছাড়াও ওই এলাকায় সক্রিয় রয়েছে কাকরা, জি ইউনিট, ব্ল্যাক রোজ, রনো, কে নাইট, ফিফটিন, নাইন এম এম বয়েজ, ক্যাসল বয়েজ, ভাইপার, পোটলা বাবু, সুজন গ্রুপ ও আলতাফ গ্রুপ। বিভিন্ন গ্রুপের কারণে নানা সমস্যা দেখা দিলে নিজেরাই ঐক্য গড়ার চেষ্টা করে। ২০১৫ সালে ১৫টি গ্যাং গ্রুপ ঐক্যবদ্ধ নাম ধারণ করেছিল ফিফটিন গ্রুপ। কিন্তু তা আর বেশিদিন টিকেনি। অন্তঃকোন্দল দেখা দেয়। অন্তঃকোন্দলের ফলে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে কিশোরদের একটি অংশ ডিসকো বয়েজ উত্তরা ও এর সহযোগী হিসেবে বিগবস নামে গ্রুপ পরিচালনা করে। দ্বিতীয় অংশ নাইন স্টার ও তৃতীয় অংশ এমএম নামে গ্রুপ পরিচালনা করে। র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গ্যাং গ্রুপ সদস্যরা সবাই উঠতি বয়সী কিশোর-যুবক। এদের অনেকে উত্তরা এলাকায় বিভিন্ন নামিদামি স্কুল কলেজের ছাত্র। এলাকার কিছু অছাত্রও এই গ্রুপগুলোর সদস্য রয়েছে। এদের ভিতর উচ্চ, মধ্য ও নিম্নবিত্তসহ সব ধরনের পরিবারের সন্তান রয়েছে। মূলত গ্যাংগুলো এলাকাভিত্তিক বিস্তার বলে জানান তিনি।

এই গ্যাং গ্রুপের অপকর্মের শিকার ট্রাস্ট স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবির। গত ৬ই জানুয়ারি উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়কে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আদনানকে। এ ঘটনায় জড়িত প্রায় সবাই ডিসকো বয়েজ উত্তরা ও এর সহযোগী বিগবস গ্রুপের সদস্য। জানা গেছে, ২০০৯ সালে শাহরিয়ার বিন সত্তার সেতুর নেতৃত্বে ডিসকো বয়েস গ্রুপ আত্মপ্রকাশ করে। ২০১৬ সালের শুরুর দিকে আক্তারুজ্জামান ছোটনের নেতৃত্বে ডিসকো গ্রুপের সহযোগী হিসেবে বিগবস গ্রুপের জন্ম হয়। উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, বেড়িবাঁধ, কোটবাড়ি, ফায়দাবাদ ইত্যাদি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার রয়েছে গ্রুপ দুটির।

এই গ্রুপগুলোর বাইরে একটি গ্রুপ করার মিশন নিয়ে মাঠে নামে তালাচাবি রাজু। নানা অপকর্মের হোতা তালাচাবি রাজুর নেতৃত্বে ২০১৩ সালে জন্ম হয় নাইন স্টার গ্রুপের। উত্তরার ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর সেক্টর এবং খালপাড়, দিয়াবাড়ি, বাউনিয়া এলাকায় আধিপত্য রয়েছে এই গ্যাংয়ের। গত বছরের শেষ দিকে এই ডিসকো বয়েজ উত্তরা ও নাইনস্টার গ্রুপের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। ডিসকো গ্রুপের সহযোগী হিসেবে তাদের সঙ্গে থাকে বিগবস। প্রচারণা চলছিল ফেসবুকে। এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে আক্রমণ করে স্ট্যাটাস দিচ্ছিল নিয়মিত। ২রা জানুয়ারি উত্তরার বয়েজ ও নাইনস্টার গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে তুরাগের গলিপাড়া এলাকায়। এ ঘটনায় মামলা হয় তুরাগ থানায়।

র‌্যাব জানিয়েছে, গত ৩রা জানুয়ারি ১৩ নম্বর সেক্টরে ব্রিজের উপরে ডিসকো বয়েজ গ্রুপ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা নাইনস্টার গ্রুপের গ্যাং লিডার রাজুকে মারধর করে। এতে রাজু গুরুতর আহত হয়। ৫ই জানুয়ারি আজমপুর ফুট ওভার ব্রিজের গোড়ায় নাইনস্টার গ্রুপের সদস্যরা পাল্টা আক্রমণ করে বিগবস গ্রুপের গ্যাং লিডার ছোটনের ওপর। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৬ই জানুয়ারি ডিসকো বয়েস গ্রুপ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা আদনান কবিরকে ধারালো অস্ত্র ও হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা র‌্যাবকে জানিয়েছে, তাদের মূল লক্ষ্য ছিল নাইন স্টার গ্রুপের রাজুকে আঘাত করা। কিন্তু তাকে না পেয়ে তার সহযোগী আদনানের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারীদের মধ্যে গ্রেপ্তারকৃত জাহিদুল ইসলাম লুইস র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছে, হামলার সময় কালো কাপড় দিয়ে মুখ বেঁধে নিজেই কুপিয়েছে আদনানকে। এ ছাড়া বাকিরা তার সহযোগী হিসেবে হামলা চালিয়েছে।

এ ঘটনায় ৭ই ফেব্রুয়ারি আটজনকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেছে র‌্যাব। র‌্যাব জানিয়েছে, রাত পৌনে ১১টার দিকে উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়ক থেকে ডিসকো বয়েস গ্যাং গ্রুপের দলনেতা শাহরিয়ার বিন সাত্তার সেতু ওরফে ডিসকো সেতুকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির বিবিএ’র শিক্ষার্থী। তার পিতা এয়ারপোর্টের একজন সিএন্ডএফ এজেন্ট। পরে সেতুর দেয়া তথ্যমতে, রাত সোয়া ১১টার দিকে উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর সড়ক থেকে বিগবস গ্যাং গ্রুপের দলনেতা আক্তারুজ্জামান ছোটনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছোটন ইউনিক এ্যাডুকেয়ারের দশম শ্রেণির ছাত্র। এছাড়া একই এলাকা থেকে মো. শাহীনুর রহমান, রমজান মোবারক, সেলিম খান, ইব্রাহিম হোসেন সানি, মিজানুর রহমান সুমন ও জাহিদুল ইসলাম জুইসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জুইস উত্তরা স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র। এ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃত অন্যদের মধ্যে সুমন এইচএসসি পাস করেছে। বাকিরা লেখাপড়া করেনি। বিগবস গ্রুপের অধিকাংশরা নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য। সুমন ও তার ভাই হকার ব্যবসা করে, সানি ইজি বাইক চালক, সেলিম গার্মেন্টে চাকরি করে, রমজান সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া ব্যবসার কর্মচারী ও শাহীন ট্রান্সপোর্টে চাকরি করে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, গ্রেপ্তারকৃত সবাই আদনান হত্যার সঙ্গে জড়িত। তাদের কাছ থেকে তিনটি চাকু, দুইটি চাপাতি, দুইটি রড, তিনটি চেইন, তিনটি সেপ্র কালার বোতল, দুটি স্কুল ব্যাগ ও চার পুরিয়া গাঁজা জব্দ করা হয়েছে। সূত্র:মানবজমিন

পাঠকের মতামত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ

‘ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরনি বেহেশতী/দুষমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তি’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ...